আজ বৃহস্পতিবার, ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কী খাচ্ছি মিনিকেট চালের নামে!

নিজস্ব প্রতিবেদক
সাদা চাল দেখতে সুন্দর, চকচকে, ভাত খেতে মজা, আর চাল টেকেও বেশি দিন। বাজারে মিনিকেট নামে যে চাল পাওয়া যায়, সেটি আসলে কী? ‘মিনিকেট’ শব্দটা এসেছে ইংরেজি শব্দ ‘সরহর’ ও ‘শরঃ’ থেকে। এটি কোনো ধানের ভ্যারাইটি নয় এটি হচ্ছে একধরনের প্রোগাম। যেখানে ভারত সরকার মিনি প্যাকেট অর্থাৎ ২ কেজি ধানের বীজের প্যাকেট কৃষকদের উপহার হিসেবে দিত। নতুন কোনো ধানের জাত আবিষ্কৃত হলে, সেটা কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয় করতে এই পদ্ধতির ভূমিকা অপরিহার্য।

অবৈধভাবে সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারত থেকে কিছু ধানের জাত বাংলাদেশে এসেছে। তখন ধানের মূল নামের পরির্বতে ভারতীয় প্রোগাামের নামানুসারে বাংলাদেশে মিনিকেট নামের প্রচলন শুরু হয়ে থাকতে পারে। বর্তমানে যেসব চাল মিনিকেট নামে বিক্রি হচ্ছে, এসব আসলে বিদেশি কোনো চাল নয়। বরং যেকোনো দেশীয় জাতের মোটা চালকে ঘষে মেজে চকচকে ও চিকন করে মিনিকেট নামে বিক্রি করা হয়। বাজারে ব্রাউন ও মোটা চালের চাহিদা অনেক কম থাকার কারণে, মিল মালিকদের অতিরিক্ত দুটি যন্ত্র কিনতে হয় এই মোটা চালকে সরু করার জন্য।
চাল কিভাবে প্রক্রিয়াজাত হয়ে বাজারে আসে? প্রথমেই ঘর্ষণের মাধ্যমে ধানের বাইরের খসখসে খোসাটিকে আলাদা করা হয়। এরপর ব্রাউন চালকে চকচকে সাদা করতে হোয়াইটেনার ও পলিশার নামক দুটি যন্ত্র ব্যবহার করা হয়।

এভাবে, চালকে সাদা ও স্মি করার কারণে আমরা গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিনস, খনিজ ও আঁশ হারাচ্ছি। আঁশের পরিমাণ কম থাকার কারণে পরিপাকে খুব তাড়াতাড়ি শকবা ভেঙে উৎপন্ন চিনি রক্তে চলে যায়। এ কারণে সাদা চালের গাইসেমিক ইনডেক্স অনেক ওপরে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, সাদা চাল গ্রহণ টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে ব্রাউন চাল দৈনিক আঁশের চাহিদার প্রায় একুসপ্তমাংশ পূরণ করতে সক্ষম।

শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সেলেনিয়ামের প্রায় এক চতুর্থাংশের জোগান হতে পারে ব্রাউন চাল থেকে। তাই ব্রাউন চাল শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। হার্টের সমস্যা, ক্যানসার, গলগন্ধ রোগ, অ্যাজমার প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে। সর্বোপরি শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। এ বিষয়ে প্রথম আলোতে জানান ড. মো. নাহিদুল ইসলাম খাদ্য গবেষক, ওডেন্স, ডেনমার্ক।

তবে স্থানীয় চাল ব্যবসায়ীদের দাবী বাজারে মিনিকেট চালের চাহিদা বেশী থাকায় আমরা এর চালের আমদানি করি অন্য চালের তুলনায় অনেক বেশী। কিন্তু মিনিকেট চাল প্রস্তুত বা সারা দেশে বাজার জাত করে করে মিল মালিক ও মোকাম গুলো। দেশী মোটা চালকে প্রক্রিয়াজাত করে মিনিকেট চালে রুপান্ত্রিত করা হয়।